22 Oct 2024, 10:20 pm

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংসদে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব, না ভোটের বিধান যুক্ত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সুযোগ বাতিল চেয়েছেন।

গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই?’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব সুপারিশ করেন। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, দলের প্রাথমিক সদস্য পদে তিন বছরের কম হলে প্রার্থিতার সুযোগ না রাখাসসহ নির্বাচনবিষয়ক একগুচ্ছ সংস্কারের সুপারিশ করেছেন বিভিন্ন দলের নেতা ও সংশ্লিষ্টরা।

সেমিনারে বস্ত্র ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনীতিবিদরাই দেশ পরিচালনা করবেন, আজকে হোক, কালকে হোক। কাজেই দায়দায়িত্ব তাদের আজ থেকেই শুরু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রিটার্নিং অফিসার ডিসিদের দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তিন ধাপে ইসি নিয়োগ করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। অনেক জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কাজেই দায়দায়িত্ব এখন থেকেই শুরু। অনেক রক্ত ঝরেছে। ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বলেছে, কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আমরা যদি ঠিক করতে না পারি তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হবে। এছাড়াও দলের প্রার্থী হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্য পদে অন্তত তিন বছর থাকতে হবে। তৃণমূল থেকে এক দুই বছর আগে থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নারী প্রার্থী ৫০ জন ১০০ জন যাই করেন সেটা সরাসরি নির্বাচন করেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিকভাবে বাতিল করা হয়েছিল। এটা করা হয়েছি ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এজন্য নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার, সে যে ভাবে হোক। সরকার মানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন নিরপেক্ষ আচরণ করে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। টাকা দিয়ে, পেশিশক্তি দিয়ে যদি ভোটে জিততে চাই, তাহলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই থাকবে। তাই যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা সততা, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্বের সঙ্গে আমরা আমাদের প্রস্তাব উত্থাপন করব।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা আমাদের নেই। এটা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের এক্তিয়ার হলো কতগুলো সংস্কারের সুপারিশ করা। আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো এক্তিয়ার নেই। একটা আলাপ-আলোচনা হতে পারে। আমাদের কতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে, ভোটার তালিকা করতে হবে। রাজনৈতিক দল সবাই মতামত ব্যক্ত করুক।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাস্তবতার নিরিখে যা সংস্কার করা দরকার, তাই করা হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোট হওয়া উচিত না। প্রয়োজনে সেখানে পুনরায় ভোট করতে হবে। শিক্ষকরা রাতের ভোটের সহযোগী ছিলেন। এক্ষেত্রে আমাদের স্কাউটদের গার্লস গাইডদের ব্যবহার করতে পারি। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে তিন বছরের বাধ্যবাধকতা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা উচিত। দলীয় প্রার্থী হতে হলে কমপক্ষে তিন বছর সদস্য থাকার বিষয়ে মতো দেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ঐকমত্য শব্দটা আপেক্ষিক। বড় দল হিসেবে বিএনপির ওপরে অনেক দায়িত্ব। সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। নির্বাচনচলাকালীন উচ্চ আদালতে নির্বাচন কমিশনের মতামত না নিয়ে কোনো রিট গ্রহণ করা ঠিক না বলেও জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুস্পষ্ট কথা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রথমে ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এসে বললেন, অনেকগুলো সংস্কারকাজ করবেন। সংস্কার কমিশন গঠন করা হলো। তিন মাস পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে। তাহলে তাদের তিন মাস সময় লাগার কথা না।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে জামায়াতের পক্ষ থেকে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, নাগরিকের তথ্য বিক্রি করা মানে দেশকে বিক্রি করে দেওয়া। যারা এই কাজটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত সবাই কাজের আগে এদের চিহ্নিত করে বিচার করা। সভা সেমিনারে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কাউকে ডাকার সুযোগ নেই জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিদেশিদের চাপে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদি মুক্তিই দেবেন তাহলে গ্রেফতার কেন করেছিলেন? ওবায়দুল কাদেরকে কেন গ্রেফতার করতে পারলেন না? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এছাড়া সেমিনারে এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান আদিব, জাতীয় পার্টি-জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2006
  • Total Visits: 1182123
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ১৯শে রবিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:২০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
21222324252627
28293031   
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018